You are currently viewing মুক্ত করো ভয়

মুক্ত করো ভয়

 

ডান্স এন্ড মুভমেন্ট থেরাপি-র মাধ্যমে অদিতি বন্দ্যোপাধ্যায় একটি নতুন ধরণের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। অনেক অটিজম আক্রান্ত বাচ্চাদের সুন্দর স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়েছেন তিনি। একাধারে নৃত্য শিল্পী, অপর দিকে তিনি চিকিৎসক। চিকিৎসা শাস্ত্রে অধ্যাপনা করেন কলকাতার একটি বিশিষ্ট মেডিকেল কলেজে। দীর্ঘ দিন ওড়িশী নৃত্যের চর্চাও করেছেন তিনি।

পুত্র ঈশান তাঁকে খানিকটা উদ্বুদ্ধ করেছে এই প্রচেষ্টায়। বিদেশে থাকা কালীন অদিতি বুঝতে পারেন যে ঈশান এর মধ্যেও এই অটিজম দানা বেঁধেছে। তারপর বহু ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে অদিতি আবার কলকাতায় ফিরে আসেন। অদিতির এখন একটাই চেষ্টা, বাচ্চারা এই অটিজম এর জন্য যেন কোনো অসুবিধে বোধ না করে, এটা মেনে নিয়ে সুন্দর সুস্থ হয়ে, যেন এক একজন সফল মানুষ হয়ে উঠতে পারে।

নৃত্য ও চিকিৎসা দুটোই শিল্পের পর্যায়ে পড়ে, আবার দুটোই শাস্ত্র, যেন দুটোর মেলবন্ধন ঘটেছে অদিতির প্রয়াসে। জীবন সুন্দর বড়োই সুন্দর কিন্তু তা যেন সবাই অনুভব করতে পারে, এমনকি যারা অটিজম-এ আক্রান্ত তাঁরাও, এই ভাবনাটাই অদিতি কে ডান্স এন্ড মুভমেন্ট থেরাপিতে উদ্বুদ্ধ করে চলেছে প্রতিনিয়ত। এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো যে সাম্য ফাউন্ডেশন নামে অদিতির নন প্রফিট অর্গানাইজশন এখন শিশুদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে যাদের স্পেশাল নীডস আছে।

এসব করার পরেও, অদিতির কি ভালো লাগে জিজ্ঞেস করাতে বললেন …ভালো লাগে কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে সময় কাটাতে, তাদের সঙ্গে ছবি তুলতেও। কারণ তারা ওঁকে প্রতিদিন কিছু না কিছু শেখাচ্ছে। এছাড়া ভালো লাগে তাঁর ছেলে ঈশান এর সঙ্গে সময় কাটাতে। ঈশান ছোট্ট, কিন্তু চিন্তা করে অনেক কিছু, যেমন তার প্রশ্ন আচ্ছা ভগবানের সাথে কেন দেখা হয় না? তাঁর কি ক্লোজ সার্কিট টিভি আছে? তবে কি করে তিনি সবাই কে দেখতে পান? মন্ত্রীদের বড়োবড়ো বক্তৃতা ঈশান অতি অনায়াসেই মুখস্থ বলে দেয়। এবার আবার সরস্বতী পুজোয় ছোট্ট ঈশান কে পুরোহিতের ভূমিকায় দেখা গেছে, যে বা যাঁরা সেই পৌরহিত্য দেখেছেন তাঁরা আর চোখ ফেরাতে পারেননি।

কোনো কিছুতেই ভেঙে পড়ার কোনো কারণ নেই, সুবিধে, অসুবিধে থাকতে পারে কিন্তু তাতে দুঃখিত হওয়ার বা সংকোচ করার কিছু নেই, নাথিং ইজ এম্ব্যারাসিং, বললেন অদিতি। বাচ্চাদের সঙ্গে সঙ্গে এখন অদিতি মায়েদেরও প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। মায়েদের প্রসঙ্গে, অদিতি বিশেষ করে বললেন, মায়েরা যেন কোনো অবস্থাতেই কাজকর্ম ছেড়ে না দেন। তাতে বাচ্চা বা মায়ের কারুরই বিশেষ সুবিধে হওয়ার নয়। মায়ের কাজকর্ম খুব প্রয়োজনীয় এটা সন্তানকেও বুঝতে দেওয়া উচিত।

বাধাবিঘ্ন এসেছে অনেক, কিন্তু অদিতি তাঁর নিজের প্রচেষ্টায় জীবনকে রূপকথা করে তুলতে চেষ্টা করছেন আরো পাঁচটা মানুষকে সঙ্গে নিয়ে, তাদের অসুবিধেগুলোও অনুভব করেছেন অদিতি। অসংখ্য শুভাকাঙ্খী যেমন তাঁর সঙ্গে ছিলেন এই প্রচেষ্টায়, তেমনই সঙ্গে ছিলেন অদিতি-র মা ও বাবা, ইন্দ্রানী আর অশোক। আলাপচারিতা শেষে অদিতি বললেন, কখনোই ভয় পাওয়ার কিছু নেই, বললেন বার বার রবীন্দ্রনাথের ‘সংকোচের বিহ্বলতা’ গানটা কবিতার মতো করে পড়া যেতে পারে। রবীন্দ্রনাথ বলছেন ‘মুক্ত করো ভয়’, এই ক্লু দিলেন অদিতি।

আমরাও অদিতির প্রচেষ্টাকে অভিনন্দন জানাই। সকলের জীবনের ক্যানভাস রঙিন হোক, আলোকিত হোক অদিতির চেষ্টায়। কান পাতলেই আকাশে বাতাসে শোনা যাচ্ছে ‘মুক্ত করো ভয়’।

Leave a Reply